May 18, 2024, 5:01 pm

সংবাদ শিরোনাম :
সিলেট মহানগর যুবলীগের ৪ নং ওয়ার্ড কমিটি গঠন”সভাপতি পদে শাকিল নির্বাচিত চোরাচালান লাইনম্যান রুবেল আহমদ বেপরোয়া জমির ধান নষ্ট করে দিলো প্রতিপক্ষ: দিশেহারা কৃষক সিলেটে ইট ভাটা নিয়ে নজিরবিহীন কেঙ্ককারী বিশ্ব গাজায় হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছে, বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না : প্রধানমন্ত্রী সুজানগর ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কমিটি গঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত মাওলানা লুৎফুর রহমানের মৃত্যু ”গুজব সংবাদ ফেসবুকে” বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বিজিবির নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে সচিবদের :প্রধানমন্ত্রীর বইমেলা বাঙালি জাতিসত্তা দাঁড় করাতে সহায়ক : কবি নুরুল হুদা দুর্নীতি-অনিয়ম র অভিযোগে ডৌবাড়ী প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্টের ৪ সদস্য বহিষ্কারের অভিযোগ ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী গোয়াইনঘাটের শীর্ষ কুখ্যাত চোরাকারবারী কালা মিয়া বিছানাকান্দি সীমান্তে অবৈধ পথে ঢুকছে ভারতীয় গরু :নেপথ্যে গোলাম হোসেন! বাদাঘাট মসজিদে ৫ লাখ টাকার অনুদান দিলেন সেলিম আহমদ এমপি রতনের আশীর্বাদ : যাদুকাটা গিলে খাচ্ছে রতন-মঞ্জু গোয়াইনঘাটে স্কুলের নামে প্রবাসীর জমি দখল গোয়াইনঘাটে এক শিবির নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ  সিলেটে শেখ হাসিনার প্রথম সফর স্মরণ করে আবহবিচ’র দু’আ মাহফিল শেখ হাসিনার সিলেট শুভাগমণের ৪৩ বছর সোমবার সিলেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক এমপির আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা নির্বাচিত সুনামগঞ্জের গোলাম আজম তালুকদার দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত মোখা:‘পরিস্থিতি বুঝে’ এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে নির্বাচনের ৪ দিন আগে নতুন যে প্রতিশ্রুতি দিলেন এরদোগান উত্তাল পাকিস্তান, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলা জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বৈধ বলার সুযোগ নেই আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘটত না: ট্রাম্প
ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারী স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণতা অর্জনের দিন

ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারী স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণতা অর্জনের দিন

Please Share This Post in Your Social Media

 এ এইচ এম ফিরোজ আলী:: ১৯৭২সালের ১০ জানুয়ারী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিন। স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা অর্জনের দিন। এদিন স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭১সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সর্বশেষ অধ্যায়টি ছিল বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসা। দীর্ঘ ৯মাস ১৪দিন পাকিস্তানের কারাগারে অন্ধকার বন্দিদশা থেকে ৮ জানুয়ারী (১৯৭২) মুক্তি পেয়ে লন্ডন-দিল্লী হয়ে প্রিয় মাতৃভূমি সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু জীবিত অবস্থায় দেশে ফিরে না আসলে হয়তো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যেত কিংবা অন্যরকম ইতিহাস লেখা হতো। ২৫ মার্চ (১৯৭১) রাতের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণার পর পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং ঢাকাসহ দেশ ব্যাপী গণহত্যা শুরু করে। এর আগে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু, ৭মার্চ দুনিয়া কাঁপানো ১৮-২০ মিনিটের ভাষণ দিয়ে সমগ্র বাঙালিকে একটি অনবদ্য ঐতিহাসিক অদৃশ্য রাখিবন্ধনে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সে কারনে পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁর ভাষণ শ্রেষ্ঠ ও অন্যতম। তিনি সুনিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করবে’। বঙ্গবন্ধুর নিদের্শ বাঙালি পালন করেছেন। বাঙালির মুক্তির জন্য সমগ্র জাতিকে তিলে তিলে একটি জাতীয় ঐক্যের মোহনায় এনে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যখন হানাদার বাহিনী বুঝতে পারে তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখন তাঁরা এ দেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে। বাড়িঘর পুড়ে ছাই করে দেয়। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, জীবিত না মৃত তা কেউ জানেন না। এদিকে পুত্রহারা মা, স্বামীহারা স্ত্রী, ভাইহারা বোনের আর্তনাদ শত শত পচাঁ লাশের গন্ধে স্বাধীন বাংলার আকাঁশ বাতাশ ভারি হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ নয় মাসের শহীদের রক্ত ও কোটি মানুষের চোখের জল একত্র হয়ে রক্তের ¯্রােতে ডুবে যায় দেশ । এদৃশ্য যারা দেখেনি, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কল্পনা কাহিনী। ২০২০সাল মুজিব বর্ষে নতুন প্র্রজন্ম বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবে।
কারাবাসকালে বঙ্গবন্ধু দেখে ছিলেন তাঁর বিচারের প্রহসন মৃত্যুদন্ড। মিয়াওয়ালী কারাগার থেকে তাঁর কবর খোঁড়ার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। বহু বছর কারাবাসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শেখ মুজিব জেলে বসেই প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ভূট্টোর কবল থেকে বিনা শর্তে মুক্তি লাভ করা। জেল থেকেই জেলের ডিআইজি শেখ আব্দুর রশিদের সঙ্গে হৃদত্যাপুর্ন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পাকিস্তানের পরাজিত জেনারেল নিয়াজির বাড়িও ছিল, মিয়াওয়ালীতে। পাকিস্তানের পরাজয়ের কোন হিংসাক্তক প্রতিক্রিয়া মিয়াওয়ালী জেলে যদি ঘটে, সেই ভয়ে শেখ রশিদ বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে নিয়ে যান তাঁর বাসস্তানে। কিছুদিন পর ইয়াহিয়াকে সরিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতার আসনে বসলেন জুলফিকার আলী ভূট্টো। তাঁর আদেশেই বঙ্গবন্ধু অন্তরিন অবস্থায় স্থানান্তরিত হলেন রাওয়াল পিন্ডির অদুরে সিহালা অতিথি ভবনে। ২৭ ডিসেম্বর সেখানে সাক্ষাত করেন জুলফিকার আলী ভ‚ট্টো। ভ‚ট্টোর জেলে বন্দী বঙ্গবন্ধু । সিহাল অতিথি ভবনে ছিল বেতার যন্ত্র। রেডিওতে বঙ্গবন্ধু আগেই শুনেছেন পাকিস্তানি ৯৩ হাজার যুদ্ধ বন্দীর কথা। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছেন তিনি বন্দী হলেও তাঁর বাঙালি বিজয়ী। জনগন বিজয় উল্লাস করছে। তাই ভূট্টোর কাছে তাঁর মুক্তি দাবী করলেন। ভূট্টোর উত্তর, আরও কিছুদিন আমাকে সময় দিন। তখন বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন ভূট্টো তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য। ৭ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে নিকটবর্তী অতিথিশালায় নৈশভোজের আমন্ত্রন জানান বঙ্গবন্ধুকে এবং তাঁকে মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানালেন ভূট্টো। পরদিন পাকিস্তান শহরে আসছেন ইরানের শাহা। তিনি নাকি বঙ্গবন্ধুর দর্শনাগ্রহী। বঙ্গবন্ধুর আশংকা দুইজন মিলে তাঁর মুক্তির শর্তারোপ করতে পারেন। তাই কোন সুযোগ ভূট্টোকে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বঙ্গবন্ধু ভূট্টোকে জানালেন, না আমাকে যেতেই হবে, আমার জনগন অপেক্ষা করছে। আমার আর থাকার উপায় নেই। আমার বাঙালির কাছে আমি ফিরে যেতে চাই।
নিরোপায় ভূট্টো পাকিস্তান আর বাংলাদেশ মিলে একটি কনফেডারেশনের কথা জানালেন। যার রাষ্ট্রপতি হবেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, আমার জনগনের সাথে দেখা করতে হবে, আমার সময়ের প্রয়োজন, দেশে ফিরেই আপনাকে জানাবো। ভূট্টো বঙ্গবন্ধুর কথামালার কাছে হেরে যান। জনগনের সাথে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা খন্ডন করতে পারলেন না। তার পর হাত খরচের জন্য ৫০ হাজার ডলার বঙ্গবন্ধুকে দিতে চাইলেন ভূট্টো। সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলেন বঙ্গবন্ধু। কারণ কারও ফাঁদে পাঁ দেয়ার পাত্র নন তিনি। ধন্যবাদ, এ খরচ আমার যাত্রার খরছের জন্য রেখে দিন। বঙ্গবন্ধু সরাসরি ঢাকায় ফিরতে চান। বঙ্গবন্ধুকে দেশে পাঠানোর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালিন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমদ। রেডক্রস কিংবা জাতীসংঘের বিমানে সরাসরি দেশে আসার ইচ্ছার কথা জানালে ব্রিটেনকে বেছে নেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বজায় রেখে ১৯৭২সালে ৮জানুয়ারী লন্ডন পৌছে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে বঙ্গবন্ধুর আগমণের খবর জানিয়ে দেয়া হলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড, দেশের বাইরে থাকলেও সকল কর্মসূচী বাতিল করে দেশে ফিরেন এবং বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বরণ করেন। বঙ্গবন্ধু লন্ডনের সবচেয়ে দামী হোটেল ক্ল্যারিজে থাকার কথা শুনে নাখোশ হয়ে বলেন, আমি এত দামী হোটেলে যাবনা। তারপরও অনিচ্ছা থাকা সত্বেও সেই হোটেলে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুকে।
হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি আবেগঘণ ভাষায় প্রবল আত্মবিশ্বাসী সুরে বলেন “আমি কনডেম সেলে ফাঁসির অপেক্ষায় ছিলাম, বাঁচব কি মরব কিছুই জানতাম না, তবে জানতাম আমার বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। তখন হোটেলের বাইরে হাজার হাজার বাঙালি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ¯েøাগান দিয়ে সেখানকার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ হতবাক। বিশ্বের প্রায় সব দেশের রাজা-বাদশা, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বড় বড় রাজনৈতিক নেতা এ হোটেলে আথিতেয়তা নিয়েছেন, এমন ঘটনা তো কেউ কোনদিন দেখেনি। বঙ্গবন্ধুকে একনজর না দেখা পর্যন্ত কারো শান্তি নেই। মানুষের ভীড় দেখে ড. কামাল হোসেন নেমে আসেন হোটেলের বাইরের গেইটে। কিন্ত কার কথা কে শুনে। বঙ্গবন্ধুকে না দেখলে কেউ এক চুলও নড়বেন না। বাইরের খবর শুনেই বঙ্গবন্ধু হোটেল ব্যালকনিতে এসে হাত নাড়েন হাঁসি মুখে। এসময় ¯েøাগানে ¯েøাগানে মূখরিত হয় অভিজাত মেফেয়ার এলাকা। বঙ্গবন্ধুকে দেখে হাজার হাজার বাঙালী হাউমাউ করে কেঁদে ছিলেন। বাঙালীর চোখে পানি দেখে বঙ্গবন্ধুর চোখও থেমে থাকেনি। বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে ঘটে যায় এক অকল্পনীয় ঘটনা। বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর গাড়িতে উঠবেন তখন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ নিজেই গাড়ির দরজা খুলে দিলেন এবং দরজা ধরে বঙ্গবন্ধু সিটে না বসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলেন। কোন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এমন সম্মান অন্য কোন রাষ্ট্র প্রধানকে কোন দিন দেখাননি। এ ঘটনায় তাঁর অনেক সমালোচনা হলেও তিনি বলেছিলেন, “আমি যাকে সম্মান করেছি তিনি হচ্ছেন, একটি জাতীর মুক্তিদাতা মহান বীর। তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করে আমরা সম্মানীত হয়েছি। তারপর লেবার পার্টির লিডার হ্যারন্ড উইলসন বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে সর্ব প্রথম তাঁকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করেন। তখন থেকেই ব্রিটিশ লেবার পার্টি সাথে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের গভীর সু-সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে ছিল।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজকীয় কমেট জেট বিমান ৯জানাুয়ারী সকাল ৭টায় জাতীর পিতাকে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ১০ জানুয়ারী দিল্লী বিমানবন্দরে পৌছে। সেখানে ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত অথবা কুটনিতিক প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধুকে সম্বর্ধনা জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন। তদানীন্তন সোভিয়েত বøকের রাষ্ট্রদূত, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, পশ্চিম জার্মান (সে সময়কার বিভক্ত জার্মানির সোভিয়েত বক্লকযুক্ত পূর্ব জার্মানির রাষ্ট্রদুত) নরওয়ে এবং ডেনমার্কের প্রতিনিধিরা। আব্দুস সামাদ আজাদ আগ থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের দিল্লী পালাম বিমান বন্দরেও হাজার হাজার মানুষের মিছিল। দিল্লীর জনসাধারণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে এক অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় সম্বর্ধনা প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতি ভিপি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধি ২১বার তোপধ্বণী দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাজকীয় সম্মান জানান। শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী বলেছিলেন, আপনার জন্য আমরা গর্বিত। আপনি আপনার জনগনকে নতুন জীবন দান করেছেন। আপনার স্বাধীনতার স্বপ্ন আজ সার্থক। বিমান বন্দরে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশে যাওয়ার পথে আমি আপনাদের মহতি দেশের ঐতিহাসিক রাজধানিতে বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের জনগনের সবচেয়ে বড় বন্ধুূ ভারতের জনগন। আপনাদের মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী যিনি, কেবল মানুষ নন, মানবতারও নেতা। তাঁর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বীরোচিৎ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ৯ মাসে আমার দেশের মানুষ শতাব্দীর পথ পাড়ি দিয়েছে। অবশেষে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের জয় হয়েছে। বিমান বন্দরের লাউঞ্জে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্টপতি কিছু সময় একান্তে বসে ছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু ইন্দ্রিরা গান্ধীকে বলে ছিলেন আপনি অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য ও আশ্রয় দিয়েছেন । মুক্তিযুদ্ধের কঠিন দিন গুলোতে আপনি পাশে ছিলেন। আমি আপনার নিকট চির ঋনী । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে অনুরোধ ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ থেকে কখন ফিরিয়ে আনবেন। তখন শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধি বিস্মিত না হয়ে মহানুভতার স্বরে বলেছিলেন আপনি, যে দিন চাইবেন সেদিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ২৪ দিনের মাথায় রাষ্টনায়কোচিত প্রজ্ঞা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি আলাপ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি আদায় করে নেয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
এদিকে ক্ষত-বিক্ষত ধ্বংস লিলার স্তুপে দাঁড়িয়ে আনন্দের বন্যায় যেমন ভেসে যাচ্ছে তেমনি বঙ্গবন্ধু বিহীন স্বাধীন বাংলাদেশে হাহাকার করছে। আবেগ আপ্লুত বাঙালির হৃদয়ে রক্তকরণ হচ্ছে। কখন ইতিহাসের মহানায়ক, প্রিয় নেতা স্বদেশের মাটিতে পা রাখবেন। ঢাকার আকাশে বাতাসে সর্বত্র সাজসাজ রব। তারপর ১০ জানুয়ারি সোমবার ১.৫১ মিনিটে ঢাকার আকাশ সীমায় ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানটি দেখা মাত্রই অপেক্ষামান জনসমুদ্র উদ্বেলিত হয়ে উঠে। বিমানের সিড়ির স্থাপনের সাথে সাথে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মুজিব বাহিনীর ৪ প্রধান, কেন্দ্রীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা মুখে হাঁসি আর চোঁখে জল নিয়ে মহান নেতাকে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা ও অভ্যর্থনা জানান। ডাকসুর সাবেক ভিপি তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ ফুল দিয়ে জাতির জনককে বরণ করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর সংযমের সব বাধ ভেঙ্গে যায়। তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সে ছিল এক অবিস্মরনীয় অভুতপূর্ব মুহুর্ত। ইতিহাসের ইতিহাস। হাঁসি কান্নার সংমিশ্রনে বঙ্গবন্ধুর জীবন সাধনার স্বপ্নের একটি ইতিরেখা। তাঁর চোঁখে তখন স্বজন হারনোর বেদনা। ভারাক্রান্ত অশ্রæর নদী আর জ্যোর্তিরময় দ্যুতি ছড়ানো মুখাভয়ে বিজয়ী বীরের পরিতৃপ্ত হাঁসি। তখন রচিত হয় হাঁসি কান্নার দোল-দোলানোর এক আনন্দ বেদনার মহাকাব্য। ৩১ বার তোপধ্বনি দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হয় মঞ্চের দিকে। ফুল ছিটানোর বৃষ্টি হয় চতুর দিকে। সেনা, বিমান, নৌবাহিনী রাষ্টপ্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করেন। বিমান বন্দর থেকে বিকাল ৪টায় রেসকোর্স ময়দানে যান বঙ্গবন্ধু। রাস্তায় সময় লাগে ২ ঘন্টা ১৩ মিনিট। মঞ্চের ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে চতুর দিকে তাকালেন, নিজে কাঁদলেন, লাখো মানুষকে কাঁদালেন। দীর্ঘ কারাবাসের ক্লান্তিতে মলিন বদনে মুখ যেন তাঁর চন্দ্রমাখা হাঁসি। তারপর স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষনে বললেন, “ফাসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ বাংলা আমার ভাষা —-। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট এখন বাংলাদেশে। এটি একটি আদর্শ অসাম্প্রদায়ীক রাষ্ট হবে। রাষ্টের ভিত্তি হবে গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। ৩০ লাখ মানুষের আতœদান স্বরণ করে দু:খ ভারাক্রান্ত বেদনা কন্ঠে বলেন, ভায়েরা, বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে-পরে সুখে থাকবে, এটাই আমার সাধনা। ২৫ শে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বর্বর পাকিস্তানি এ দেশের সব বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছে। হাজার হাজার মা বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম কুকীর্তির বিচার করতে হবে। জনসভায় বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, জনাব ভূট্ট্রো সাহেব আপনারা শান্তিতে থাকুন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তোমাদের স্বাধীনতা তোমাদের রইল। আমাদেরকে স্বাধীন থাকতে দাও। পরিশেষে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালো জয়ী কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, “সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি” কবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কবি গুরু তুমি এসে দেখে যাও, তোমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে। তারপর ১২জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে আবু সাইদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপ্রতি বানালেন। তাঁর ৫৪ বছরের জীবনে ৪হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর গোটা জীবন কেটেছে আন্দোলন-সংগ্রামে। জীবন দিয়ে তিনি বাঙালির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাঙালি-বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু এক সুতায় গাঁতা। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুন্ধের ইতিহাস জেনে হৃদয় দিয়ে লালন করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের ঋন শোধ করবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। সেটাই হোক তরুন প্রজন্মের অঙ্গীকার।





Calendar

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031



  1. © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2017 sylhet71news.com
Design BY Sylhet Hosting
sylhet71newsbd